Skip to main content

Featured

টুকরো কথা - ২৯

এভাবেই শেষ হওয়ার ছিল হয়তো। কত চিৎকার কত চোখের জলকে চুপ করিয়ে দিয়ে চলে যেতে হত বহুদূর। ক্ষমা করতে হত, সত্যি ক্ষমা করতে হত শত অন্যায়। অথচ ক্ষমা করতে পারলে চলে যেতে হত না সব কিছু অক্ষত ফেলে। দিনের শেষে বুঝলাম ক্ষমা অত্যন্ত দ্বিপাক্ষিক। আমরা একচেটিয়া ক্ষমা করি বা করি না। আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলতে হয় নিজের না বলা কথা। কান্না গিলতে গিলতে গলা ব্যথা হয়ে যায়। ক্ষমাহীন হয়ে থেকে যেতে নেই। অনেক দেরী হয়ে গেল বুঝতে। তার মধ্যে কালশিটে থেকে না খেয়ে বমি, রাতের পর রাত জেগে থেকে ভাবা কী করলে সহজে কম কষ্টে আরেকটু কম কষ্টে মরতে পারব কোনও কিছুই বাদ দেইনি। কারণ আমি মরেছি অনেকবার। অনেক কাটা দাগ নিয়ে আবার উঠেছি ঘুম থেকে। ভুলতে পারব না অনেক কিছুই কিন্তু আমায় শিখতে হবে ক্ষমা করে আরও দূরে চলে যেতে, এতটাই দূরে যেখান থেকে নিজেকে দেখা যায়না।

অসমাপ্ত

প্রতিদিনের মত ভাবতে বসি। কী যেন লিখতে হত। মনে পড়তে পড়তে তালগোল পাকিয়ে লেখা হয়ে ওঠেনা। নিয়ম মেনে অসুখী দুপুর গড়িয়ে যায়।

মায়ের আজ বুঝি স্নান করতে বেলা হয়ে গেল। দূর থেকে শুনেছি শাঁখ বাজল। তিনবার বাজল? গুনতে ভুল হয়ে যায়। দুবার শুনেছি আজ। রোদে পুড়ে যেতে যেতে মনে পড়ে যায়, কেউ বলছিল, "I gazed—and gazed—but little thought" এমন তীব্র হলদে আলোয় হয়তো কোনও চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে মায়াবী স্বপ্ন; দেখতে দেখতে ঘোর লেগে যায়।
'ড্যাফোডিল?' 'না, সূর্যমুখী।'
একটু পরে বৃষ্টি নামবে। পুকুর ছাপিয়ে জল উঠছে। সূর্যমুখীর ক্ষেত ডুবতে থাকে। একসময় ওদের ছোঁয়া যায় না। ভয়ে জল থেকে হাত সরিয়ে নেই। কে যেন বলল, 'ড্যাফোডিল?' নার্সিসাস?
গলা শুকিয়ে আসে। ভয়ে। তেষ্টায়। ছুটতে ছুটতে বাড়ি পেরিয়ে যায়। শুধু ঘরে ফেরা বাকি থেকে গেল।
মা প্রদীপ জ্বালে। তুলসী তলা, শিউলী গাছে সন্ধ্যে নামল হয়ত। গত জন্মের মতো ধূপের গন্ধ মনে পড়ে। আমার দুচোখ জুড়ে জলপট্টি দিতে দিতে কে যেন নিশ্চিন্ত হয়। আমিই বোধহয়। জ্বর নামে। চোখ বেয়ে। এবার ফিরে যেতে হবে, মা। বলা হয়ে ওঠেনি। তার অনেক আগেই ঝড়ো হওয়ায় কতকিছু ভেঙে পড়েছে। বুঝতে পারি প্রদীপ থেকে আরাত্রিক তাপ ফুরিয়ে আসে। কর্পূর শেষ হয়েছে অনেক কাল আগেই। জানলার পাশে দাঁড়ালে জানতে পারি এখান থেকে দৌড়েও মা-এর কাছে ফেরা যায়না। নিজের কাছেও না। সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া আফসোস আমায় বুকে টেনে নেয়, এমন আমি কেন করলাম? এ প্রশ্ন আমায় খাদ দেখিয়ে আনে। যেখানে আমি বাঁচি, যেখানে আমার বহুজন্মের মৃতদেহ সাজানো থাকে, শোকহীন। আঘাতহীন। "His feet among the flowers, he sleeps." এরপর কে যেন বলবে, 'নার্সিসাস?'
টেবিলের কোণে কুড়িয়ে আনা বকুলগুলো সাজিয়ে রাখি।


Comments