Skip to main content

Featured

টুকরো কথা - ২৯

এভাবেই শেষ হওয়ার ছিল হয়তো। কত চিৎকার কত চোখের জলকে চুপ করিয়ে দিয়ে চলে যেতে হত বহুদূর। ক্ষমা করতে হত, সত্যি ক্ষমা করতে হত শত অন্যায়। অথচ ক্ষমা করতে পারলে চলে যেতে হত না সব কিছু অক্ষত ফেলে। দিনের শেষে বুঝলাম ক্ষমা অত্যন্ত দ্বিপাক্ষিক। আমরা একচেটিয়া ক্ষমা করি বা করি না। আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলতে হয় নিজের না বলা কথা। কান্না গিলতে গিলতে গলা ব্যথা হয়ে যায়। ক্ষমাহীন হয়ে থেকে যেতে নেই। অনেক দেরী হয়ে গেল বুঝতে। তার মধ্যে কালশিটে থেকে না খেয়ে বমি, রাতের পর রাত জেগে থেকে ভাবা কী করলে সহজে কম কষ্টে আরেকটু কম কষ্টে মরতে পারব কোনও কিছুই বাদ দেইনি। কারণ আমি মরেছি অনেকবার। অনেক কাটা দাগ নিয়ে আবার উঠেছি ঘুম থেকে। ভুলতে পারব না অনেক কিছুই কিন্তু আমায় শিখতে হবে ক্ষমা করে আরও দূরে চলে যেতে, এতটাই দূরে যেখান থেকে নিজেকে দেখা যায়না।

"যা কিছু মোর ছড়িয়ে আছে" : সমাপ্তি

২০২১

~তারটা এখনো ছেঁড়া, বল?
~আবার শুরু করলি তিতাস? অরণী, কিছু বল এটাকে।
~কী বলব? ঠিকই তো বলেছে। শরণ‍্যা, তোর সাথে যোগাযোগ করার থেকে মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান করা বেশি সহজ।
~হেঃ হেঃ হেঃ
~দাঁতগুলোকে নিয়ন্ত্রণ কর, তিতাস তুই। তুই তো মানে... ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না তোকে describe করার। কী দিয়ে যে ভগবান তোকে বানিয়েছে। পাঁক দিয়ে, বুঝলি তো, পাঁক দিয়ে।
~আজি কমলমুকুলদল খুলিল, দুলিল রে দুলিল।
~শরণ‍্যা, চুপ করা ওকে। নয়তো মরে যাবে আজ আমার হাতে।
~হ্যাঁ রে তিতাস, whatsapp uninstalled, instagram account ই deleted, facebook deactivated, telegram deleted, twitter deactivated, tumblr deleted, signal deleted... কেন করিস এরকম একটু বল? তুই এরকম কেন, তিতাস?
~কীরকম বলতো অরণী?
~বেয়াড়া স্বভাবের। বন্য প্রকৃতির। স্বাধীনচেতা। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু নিজের নিয়ন্ত্রণে থাক। আর তোর sense of humour...terrible । অসহ্য। এককথায় incorrigible। তুই জানিস সেটা?
~আচ্ছা, এবার থেকে আমি আর ওরকম করবো না। আমি ভালো হয়ে যাব, দেখ। তখন আমায় নতুন ডাকবি? বাঁধবি নতুন বাহুডোরে? আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
~তিতাস, গরমের ছুটিতে রাঁচি যাবি?
~রাঁচি যেতে পারি, কাঁকড়াঝোড় নিয়ে যাবি? ওখানে ঘাগরা নদীর পাথরগুলোকে তাহলে জিজ্ঞেস করতাম কতখানি দৃঢ় হলে সবকিছু এমন সহজে ভেঙেচুরে যায়না, কতখানি শক্তি থাকলে নিজের কাছে রাখা যায়, যেমন ক'রে ঘাগরার কাছে তার পাথর থেকে গেল?
~পুরোপুরি গেছে রে অরণী, কি হবে এবার?
~তাই তো দেখছি শরণ‍্যা। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করবো তো, দেখ, সিনচ্যান এর মত আচরণ করবে। কি হয়েছে তোর? জানি তুই উন্মাদ, কিন্তু এখন দেখছি পুরোটাই গেছে।
~হেঃ হেঃ হেঃ, ম্যায় হুঁ এক উড়তা রোবো ডোরেমন।
~ও একটু ভুল হয়ে গেছে, সিনচ্যান না এখন ডোরেমন চলছে। হতভাগাটা কোনদিন শুনবো মরে গেছে। আমার একদম সুবিধের মনে হয়না জানিস তো, তুই বুঝিস না, কিন্তু তোকে নিয়ে আমরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। তুই স্বাভাবিক নোস বাকিদের মত। তিতাস, কথা বলতে শেখ। মানুষের মত করে দুঃখ, কষ্ট, ভালোলাগা, মন্দলাগা, ভালোবাসা, বিশেষ করে রাগ প্রকাশ করতে শেখ। শুনছিস তুই? খেলা করছে দেখ, চামচটা নিয়ে। জানোয়ার একটা।
~শুনছি তো বলনা, কথা বলতে শেখ, প্রকাশ করতে শেখ। তারপর বল অরণী শেখ, মানে শুধু অরণী, হেঃ হেঃ বল।
~দেখেছিস, তুই যে শুনছিস তার প্রকাশ হচ্ছে, চামচ আর টিস্যু নিয়ে খেলা করছিস।
~খেলছিনা। দেখ, গোলাপ বানাচ্ছি তোদের দুটোর জন্য। আমার ভালোবাসার প্রকাশ তো তোরা বুঝলি না, এবার থেকে ভালোবাসলেই গোলাপ দেব। এই, বলছি, গোলাপ গাছকে ভালোবেসে গোলাপ দেব? তবে কি বলত পাশের কোনও গাছ থেকে ফুল নিতে হবে। নয়তো যে গাছের ফুল তাকেই দিলে কীরম দেখায় ব্যাপারটা। আচ্ছা, আচ্ছা, ওরকম করে তাকাচ্ছিস কেন শরণ‍্যা? আচ্ছা, চুপ করছি। আমি এমনিতেও বুঝতে পারছি আমার আজ নিস্তার নেই। তোরা বলতে থাক। 
~বলছি তুই হয় ছ্যাবলামি করিস, আর নয়ত এমন এমন কথা বলবি সেগুলোকে বোধগম্য করতে হলে বইপত্র খুলে বসতে হবে। এর মাঝামাঝি জায়গায় আয়। নয়তো তুই বুঝতে পারছিস না, তুই কিন্তু বাঁচবি না।
~এবার আমি স্বাভাবিক মানুষের মত কিছু কথা বলছি। মন দিয়ে শোন। আমার বেঁচে থাকার সামান্যতম ইচ্ছা কোনওদিন ছিল না। আজও নেই। আমি আজ অবধি কোনও দিন কোনও স্বাভাবিক মানুষের মত আনন্দ পাইনি। আমার সব ভালোলাগাগুলো ভয়ানক আকার নিয়েছে, সমস্ত ভালোবাসা আমায় ভুল প্রমাণ করে কঠিন শাস্তি দিয়েছে। হয়ত আমি যাকে ভুল বলে জানি, সে এক অপরাধ। আমি যখনই আনন্দ পেয়েছি, সব হারিয়ে গেছে। আমি ওইসব আনন্দকে এখন দূর থেকেই দূর করে দেই।
তোদের খুব ভালোবাসি। তোরা আমায় সহ্য করিস। তাই তোদের আঁকড়ে ধরি। এই বলছি তো, দেখবি কাল থেকে আবার কি হয়ে যায়। আমি নিজেও জানি এরকমভাবে চললে আমি বেশীদিন বাঁচবো না। বিশ্বাস কর, আমি ভিতর থেকে ভেঙেচুরে গেছি। আমি জানি এর জন্য অনেকটা আমি দায়ী, অনেকটা না হয়তো পুরোটাই। আমি শুধু নিজের কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচছি। এভাবে যতদিন চলে। এর বেশী আমার কিছু চাওয়ারও নেই। 
কিন্তু ততদিন ইয়ো 🤘🏻ক'রে বেঁচে থাকবো, একদম। তোরা হাসবি, রাগ করবি, আমার ওপর চোটপাট করবি এইটুকুই চাই। আবার কি। কিন্তু জানিস তো আমি যা দিয়েছি তার থেকে আমি পেয়েছি অনেক অনেক বেশী। জানিস তো শরণ‍্যা, জানিস তো অরণী, আমি না আর বইতে পারছি না আমার সব পাওয়া। মাঝেমধ্যে মনে হয় জিজ্ঞেস করি, কী দরকার ছিল এসবের? আমি তো কিচ্ছু চাইনি কখনো কারো কাছে। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করব সেইটাই ভুলে গিয়েছি।
~তিতাস? তুই আমাদের শক্তি। বুঝিস সেটা? তোর চোখে কখনও আমরা জল দেখিনি। আজ এ কী দেখছি? কেন দেখছি ?
~শোন অরণী, আমি কাঁদছি না রে। আমার lacrimal gland থেকে জল বেরোচ্ছে আজকাল হঠাৎ হঠাৎ।
~আবার শুরু করল, তুই বলবি কী হয়েছে? 
~হ্যাঁ, বলছি তো সেটাই, রাগ করিস না, বলছি বলছি, ২০২০ এর ১ লা জুলাই মঙ্গলযান মঙ্গলের স্যাটেলাইট Phobos-এর ছবি তুলেছে।
~কুত্তার লেজ জানিস তো, সোজা হয়না।
~আবার রাগ করে, আচ্ছা বলছি, ১৮ তারিখে MCC ক্যামেরায় মার্সের full disc imageও  ক্যাপচার করতে পেরেছে।
~জানোয়ার একটা। তিতাস, তোর মত এত শয়তান আমি জীবনে দুটো দেখিনি। শরণ‍্যা? ...
~শরণ‍্যা, কাঁদছিস কেন? আরে বোকা মেয়ে। কাঁদিস না । দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।
~তিতাস, জানিস তো আমরা ছেঁড়া তার জোড়ার একটা উপায় পেয়েছি।
~কী পেয়েছিস, বল বল বল!
~সংসার গহনে
নির্ভয়
নির্ভর,
নির্জন
সজনে
সঙ্গে রহো
চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না ।।
একটাই উপায়। সময়-আছে, না-নেই; সময় ফুরিয়ে-এলো, না-জন্ম নিল কিচ্ছু জানার দরকার নেই। যতদিন বাঁচব ততদিন হাতটা কখনও ছাড়া যাবে না। আর তোকে তো জাপটে রাখতে হবে। যত ব্যস্ততাই আসুক, যতই ঝগড়া, মান, অভিমান আসুক দিনের শেষে একটা সময় সব কাজ ফেলে আমরা একসাথে খুব করে বাঁচব। দিনের এই শেষটুকুর জন্য বাঁচব। তিন জোড়া হাত একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করবে। কি রে, ঠিক বলিনি বল?
~শরণ‍্যা, অরণী, তোরা থাকবি তো? আমার দিব্যি.....
~একদম নাআআ তুই কোনও দিব্যি দিবিনা আর। সব দিব্যি আমাদের।
~তুই শুধু নিজের আর্টফর্মটা পাল্টা। দেখ কত আলো, কত রঙ, দেখ সবাই হাসছে, সবাই থাকবে সাথে, সবাই আছে দেখ একবার, তিতাস?
.
.
.
.
.
.
সোনাঝুরির বন। কোপাইয়ের জল পা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে ভেসে আসছে...
এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে।
তার হৃদয়-বাঁশি আপনি কেড়ে বাজাও গভীরে॥
নিশীথরাতের নিবিড় সুরে বাঁশিতে তান দাও হে পুরে
যে তান দিয়ে অবাক কর' গ্রহশশীরে॥
যা-কিছু মোর ছড়িয়ে আছে জীবন-মরণে,
গানের টানে মিলুক এসে তোমার চরণে।
বহুদিনের বাক্যরাশি এক নিমেষে যাবে ভাসি--
একলা বসে শুনব বাঁশি অকূল তিমিরে॥

মাথার কাছে কিছু ছাতিম ফুল রাখা।
দু জোড়া হাত আজ থেকে বৃত্ত সম্পূর্ণ করবে। ভালো করে তাকালে তুমি দেখতে পাবে, একটা বিনি সুতোর মালা কোপাইয়ের জলে ভেসে গেছে।



কথোপকথনটা (১৮/০৯/২০২১)-র। শুধু অরণী, শরণ‍্যা দুজন নয়, একজন। লিখতে গিয়ে একঘেয়ে লাগল। তাই তাকে আমি ভেঙে দিলাম দুই-এ। কিন্তু তার প্রতি আমার ভালবাসা ভাগ হবেনা এতটুকু। আমার প্রিয় বন্ধু। তার আসল নামটা আমার কাছে খুব যত্নে রাখা আছে। আর কথোপকথনের শেষ ঘটনাটুকু না হয় ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। আমি ততক্ষণে সিনচ্যান না হয় ডোরেমন এর রোলটা প্র্যাকটিস করি....আসমা কো ছুঁ লু, তিতলি বান উড়ু........

Comments