Skip to main content

Featured

টুকরো কথা - ২৯

এভাবেই শেষ হওয়ার ছিল হয়তো। কত চিৎকার কত চোখের জলকে চুপ করিয়ে দিয়ে চলে যেতে হত বহুদূর। ক্ষমা করতে হত, সত্যি ক্ষমা করতে হত শত অন্যায়। অথচ ক্ষমা করতে পারলে চলে যেতে হত না সব কিছু অক্ষত ফেলে। দিনের শেষে বুঝলাম ক্ষমা অত্যন্ত দ্বিপাক্ষিক। আমরা একচেটিয়া ক্ষমা করি বা করি না। আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলতে হয় নিজের না বলা কথা। কান্না গিলতে গিলতে গলা ব্যথা হয়ে যায়। ক্ষমাহীন হয়ে থেকে যেতে নেই। অনেক দেরী হয়ে গেল বুঝতে। তার মধ্যে কালশিটে থেকে না খেয়ে বমি, রাতের পর রাত জেগে থেকে ভাবা কী করলে সহজে কম কষ্টে আরেকটু কম কষ্টে মরতে পারব কোনও কিছুই বাদ দেইনি। কারণ আমি মরেছি অনেকবার। অনেক কাটা দাগ নিয়ে আবার উঠেছি ঘুম থেকে। ভুলতে পারব না অনেক কিছুই কিন্তু আমায় শিখতে হবে ক্ষমা করে আরও দূরে চলে যেতে, এতটাই দূরে যেখান থেকে নিজেকে দেখা যায়না।

"বৃষ্টি থামার শেষে"

অভিসার মানে ঠিক ততটা যাওয়া নয়, যতটা যেতে চাওয়া

                                                                                ~ সুনেত্রা ঘটক

আজ থেকে প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা। "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" পড়তে পড়তে বছর সতেরোর যে মেয়েটা ভাবে, 'এসব আবার কী?, ভীষণ বোকা বোকা তো!', যুক্তি-তর্কের যূপকাষ্ঠে  'অভিসার' শব্দ বলিপ্রদত্ত হয় যার নিষ্ঠুর হাতে; সেই হাত আজ কাঁপছে। তীব্র অনুকম্পন। প্রতিটা আঘাত, নিজের প্রতি ধিক্কার ছারখার করে দিচ্ছে এক অপরিণত বাইশকে। যন্ত্রণার দায় প্রতিবারের মত এবারেও মাথা পেতে নিয়েছে কালো ফ্রেমের আড়ালে থাকা দুই চোখ। শুধু অপরিবর্তনীয় হিসেবে ... 

... বোকা মেয়ে আজও বোকা থেকে গেছে। 

                                                                                                                                                                  

অপ্রাপ্য আর প্রাপ্তির মাঝে যদি কোনওদিন দূরত্ব মেপে দেখো, তবে তার একক যেন হয় শূন্য জীবন।

                                                                                                                                                                  

সাত রঙের আলোয় হয়তো কোনও চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে মায়াবী স্বপ্ন; দেখতে দেখতে ঘোর লেগে যায়। বিস্মৃতপ্রায় কিছু শব্দের মৃত্যুতে আজ পৃথিবীর এক কোণ শান্ত হয়ে আসবে, মৃত্যুর মতো শান্তি । একটু পরে বৃষ্টি নামবে। এসব দেখে কি খুশি হয়েছে মেয়েটা? বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। 

বৃষ্টি আসলে আজ বড় কষ্ট হয় তার।


তোমার অভিসারে যাব অগম পারে...


যে চাওয়ার কাছে মাথা নত হয়ে যায়, যে চাওয়ার মূল্য আকাশ ছুঁতে পারে, যাকে পেতে চাওয়ার মানে তল হারিয়ে ফেলা তার কথায় চোখের জল শূন্যতা বোঝে। বোঝে সে  "All I loved, I loved alone" ? যে অভিসারের অনুভব একসময় অস্পৃশ্য ছিল কোনও এক বছর সতেরোর মেয়ের কাছে, আজ তার সামনে ছায়া পড়ে । অগম পার শুধু অগম্যই নয়, অদৃশ্যও হয় কারো কারো কাছে। এরপরও ? 


চলিতে পথে পথে বাজুক ব্যথা পায়ে...


প্রত্যাশাহীন ঋণ? ঈশ্বরের কাছে ধার আছে কিছু। কেন বোঝ আমায়? আমি তাকে জিজ্ঞেস করি। এই প্রশ্ন আজ প্রাসঙ্গিক। বোঝার ও বুঝতে পারার বোঝা বিষম বালাই। যে অভ্যেস নোঙর চেনায়, যে অভ্যেস আবেশ জানে সে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে আজ। বই পড়ে হঠাৎ খবর আসে। এরপর ?... 

... The more you understand, the more you love; the more you love, the more you understand. They are two sides of one reality. The mind of love and the mind of understanding are the same.

~Thich Nhat Hanh

শুধু নিজের প্রতি ধিক্কার ছাড়া কী অবশিষ্ট থাকে ? যা কিছু অবশিষ্ট তা উচ্ছিষ্ট বলে মনে হয়। এমন অসংলগ্নতার মধ্যে কেউ যদি নিঃশব্দ খোঁজে, কোনওদিন, জেনো আমি আছি। এক ঘর জল বুকে নিয়ে আমি আছি। নোঙর উঠে যায়। একটা গান থেকে যায় শুধু,

मैं डूब रहा हूँ , अभी डूबा तो नहीं हूँ
चुप छाप सही मसलेहतन , वक़्त के हाथों
मजबूर सही, वक़्त से हारा तो नहीं हूँ
मैं डूब रहा हूँ , अभी डूबा तो नहीं हूँ

এরপর ? আরও কিছু বলার থাকতে পারে? ...


সকলি নিবে কেড়ে দিবে না তবু ছেড়ে
মন সরে না যেতে ফেলিলে একী দায়ে ...


পুড়ে যাওয়া কথার আবরণ খসে পড়তে চায়। আমি আঁকড়ে ধরি। আমার দগ্ধ হাতে সংশয় মাথা তুলে দাঁড়ায়, প্রাণপণ তাদের ধরে রাখতে চেয়েছি। পারিনি আমি।  আমার অসাড় শরীর ছুটেছে। উন্মাদের মত। পলাতক। আজ তার পালানো বড় প্রয়োজন। দুচোখ অচেনা ভিড়ে ছাপিয়ে যায়। বাধন আলগা হয়, সেতুও ভেঙে পড়ে। ভাঙতে ভাঙতে কখন যে পাড়ও ভাঙতে শুরু করে, আমি পারিনি জানতে। একসময় অতল গভীরতায় প্রতিসৃত আলো কেঁপে ওঠে। ভয়ে। আমার চাওয়ার তো কিছু ছিলনা, শুধু পাওয়া টুকু আমার চাওয়ার থেকে অনেক দূরে। আমার দৃষ্টি পরিসরের বাইরে, অনেকখানি বাইরে। 

To love without knowing how to love wounds the person we love.

একই রকম অসহায়তা নিয়ে আমি আছি, আমার কাছে। খুব দূর থেকে যাকে দেখেছিলাম একদিন, তার কাছে এসে বসি। বিপর্যস্ত। পরিমাপহীন গ্লানি নিয়ে বসে থাকা আমি-র সামনে দাঁড়াতেই হত। আমি তার মাথা হেঁট ক'রে দিয়েছি। নিজের হাতে যাকে ছোট করেছি। যার আশৈশব লালিত শৃঙ্খল ভেঙে চুরে তছনছ ক'রে দিয়েছি। তার কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি বারবার। চার দেওয়ালের কঠিন স্পর্শে সে আমায় আগলে রেখেছে। আমার অসহায় দৃষ্টির কাছে আমি বাষ্প হয়ে যাই। জানলার পাশে কালো ফ্রেমের আড়ালে চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে। এটাই চাওয়া শুধু, এমন করে কাউকে আঘাত কোরোনা, মহাকাল, আর কাউকে কখনও নিজের কাছে প্রত্যাঘাতহীন আঘাতে ফিরিয়ে দিও না, অগম পার যদি দাও তাকে সেই পথে চলার পথটুকু চিনিয়ে দিও, তার উৎস আর গন্তব্যে কোনও ভুল দিও না। তার কাছে এবারের মত কিচ্ছু নেই, সবটুকু দিয়ে যে প্রার্থনা করেছে, "ভাল হোক।" 

আমার ভালবাসার নাম থাকল, বকুলফুল।

                                                                                                                                                                  

যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন

অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা, বাঁধা বেদন-ডোরে
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে একে একে তারা
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন।

                                                                                                                                                                  

Comments