Skip to main content

Featured

যে চোখ দিয়ে আমি মানুষ চিনলাম, যে কান দিয়ে আমি শুনলাম ভালোবাসি, যে হৃদয় দিলাম শতদল করে, সবশেষে যে শরীর আমি চিনেছি ঈশ্বররূপে, তার প্রতিটি স্তর মিথ্যে, আবেশ মিথ্যে। এমন ঘৃণ্য অভিজ্ঞতা অতি বড় শত্রুরও যেন না হয়। 

ঠাকুরদালান ও পাঁচ বছর

পুজো বলতেই একটা দমকা হাওয়ার কথা মনে পড়ে। ধূপ-ধুনো-চন্দন। ভুলতে বসা একটা মেঠো পথ, ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এলো। যোগাযোগ যেন একটা সুতোয় তার সমস্ত ভার তুলে দিয়ে শিমুল তুলো হয়ে ভেসে যাচ্ছে ঠাকুরদালান হয়ে বুড়োমা-র ঘর, তারপর পুকুরঘাট। শ্যাওলায় পা পিছলে সেই যে ছলাৎ করে আলোটা ডুব দিল, আর তো উঠে এলো না? আর সেই শিমুল তুলো? তার খবরও আর কেউ রাখেনি। পুজো পুজো গন্ধ হোস্টেলের জানলায় টোকা দিতেই তাকে বললুম, বাইরে কেন? ভিতরে আয়। ওমনি এক ঝাঁক শ্যামা পোকা হয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে মন খারাপি হাওয়া। লুপে বাজতে থাকা (অবশ্যই 'আশা ছিল ভালোবাসা ছিল' নয়) একটা সুর, হাত ধরে দে ছুট। মেঘগুলোর আড়ালে লুকোতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় ধ্রুবতারা। একমনে বেজে চলা সেই মাটি মাখা সুর মহুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে কোপাইয়ের পাশে। ভৈরবী থেকে আশাবরী, কোমল থেকে শুদ্ধ ঋষভের সুর ছড়িয়ে পড়ছে ঠাকুরদালানে। তিক্ত বিষাদ শেষে চোখে মুখে কে যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে শান্তির জল, ভোরের শিউলি হয়ে শুষে নিচ্ছে হাহাকার করে ওঠা  শিশির, এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে ঝরে পড়ছে পাতা বেয়ে আর গালের পাশ থেকে মাটিতে পড়ার আগেই পদ্ম পাতায় কেউ ধরার চেষ্টা করে গেল আপ্রাণ। পিছন ফিরতেই চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসে। প্রতিবারের মতো। তার মধ্যেই ঝলমলিয়ে ওঠে 'শতেক আলোর ভিড়'। ভিড় ঠেলে এগোতেই মায়ের মুখ। সেই পুকুরের জলে লুকিয়ে পড়া আলো, ডুব সাঁতার দিয়ে উঠে আসে এক নিঃশ্বাসে। ছড়িয়ে পড়ে মায়ের মুখ জুড়ে। ভাঙাচোরা স্বর নির্বাক থেকে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। একক থেকে বহু হাত ঘিরে ঘিরে রাখে। বাঁধনও তবে মুক্তি রূপ পায়? এভাবে। প্রবাস থেকে ময়ূরপঙ্খী করে ঘরে ফিরছে কত কত দলছুট। হোস্টেলের জানলা থেকে নীচের দিকে তাকালে পটভূমি বদলে যায় প্রত্যেক পলকে। সেই ঠাকুরদালান, সন্ধ্যারতি, বিন্দু বিন্দু হয়ে জ্বলে উঠছে ১০৮ প্রদীপ। দাদানের পিঠে হেলান দিয়ে আছে ১৮ টা বছর। পিঠে ব্যাথা লাগে না তোমার? উত্তরে একটা মন ভালো করে হাসি ছড়িয়ে পড়ত সদ্য সেজে ওঠা নাটকের মঞ্চ জুড়ে। মেরি বাবা নাটকের প্রস্তুতি চলছে। বইয়ের ফাঁকে উঁকি দেওয়া সিগারেট দেখে খুদে খুদে চোখ পাকিয়ে দিয়াআআআ বলে ডাকতে যাবে কেউ। আর ঠিক তক্ষুনি পর্দা উঠতেই হৈ হৈ শুরু হবে। জোনাকিগুলো এসে পালটে দেয় দৃশ্যপট। সেই যে যাত্রামঙ্গল পড়া হল, মঙ্গলদীপ জ্বলছে কিনা দেখতে দেখতে কেটে গেল চারটে বছর। শুধু জানা হলনা, এত ভার কিভাবে বইতে হয়। অ্যালবামের ঘোলাটে ছবি সে কথা জানেনা। আজ শুধু কোনও ময়ূরপঙ্খী আসেনি জানলার পাশে। অনেক ওপরের দিকে তাকালে শুধু দেখা যায় মঞ্চের পর্দা উঠে যাচ্ছে আর সবটুকু আলো নিয়ে জ্বলে উঠেছে ধ্রুবতারা। কেউ ভীষণ করে চাইছে আরাত্রিক যেন এবার ধ্রুপদ হয়ে ওঠে।

রাতের তারা চোখ না বোজে....

Comments