যে চোখ দিয়ে আমি মানুষ চিনলাম, যে কান দিয়ে আমি শুনলাম ভালোবাসি, যে হৃদয় দিলাম শতদল করে, সবশেষে যে শরীর আমি চিনেছি ঈশ্বররূপে, তার প্রতিটি স্তর মিথ্যে, আবেশ মিথ্যে। এমন ঘৃণ্য অভিজ্ঞতা অতি বড় শত্রুরও যেন না হয়।
Featured
- Get link
- X
- Other Apps
স্কুলের ইতিবৃত্ত ০১
মৃত্যুঞ্জয় কবিতাটা চোখে পড়ার থেকে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া কতগুলো স্মৃতি উড়ে বেড়াচ্ছে ঘর জুড়ে। পাছে হারিয়ে ফেলি সেই ভয়ে গুছিয়ে রাখলাম ওদের। তখন আমি ক্লাস 9 অথবা 10 এ পড়ি। দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার, কোনো এক অনমনীয় ইচ্ছের জোরে তিন বন্ধু স্কুল ডুব দিলাম। পরিণতি জানতে পারলাম পরের মঙ্গলবার বাংলা ক্লাসে। ব্যাকরণ এর বদলে "মৃত্যুঞ্জয়" এর প্রশ্ন লিখতে দেবেন মানসী ম্যাডাম। মৃত্যুঞ্জয় নামটা আমরা তিনজনই প্রথম শুনলাম। ফলে পড়া হয়নি, স্কুলে আসিনি ইত্যাদি মৃত্যুবাণ বুমেরাং হয়ে তিনজনের কাছে ফিরে এসেছিল। অতএব চেষ্টা চলল নিজেদের মৃত্যুঞ্জয় প্রমাণ করবার। কিন্তু এতো আর জ্যামিতির প্রয়োগ নয় যে আবিষ্কার করার দুঃসাহস দেখাব। সুতরাং গল্পের গরু গাছে উঠল। দুপাশে দেখলাম কত কী লিখছে পাশের দুটো। আমিও শুরু করলাম লেখা। এরপর যা দাঁড়িয়েছিল সেটা ভয়াবহ। মতলবটা ছিল যা খুশি লিখব মন দিয়ে। ঘন্টা পড়বে। আমরা তিনজন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর পরের দিন খাতা দেখাব। আগের ইতিহাস পিরিয়ডে সংবিধান পরে মনে যে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা জাগ্রত ছিল তা প্রয়োগ করে লেখার বিষয় নির্বাচিত হল। আমি লিখেছিলাম মৃত্যুচেতনায় জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ। নাঃ শেষ অবধি বিপ্লব দীর্ঘজীবী হয়নি। ঘন্টা পড়ার মিনিট তিনেক আগে এক আচমকা বজ্রপাতে আমাকে মাকড়সা না না একেবারে শহীদ হয়ে (যদিও গোপনসূত্রে খবর আমায় নিকেশ করা হয়েছিল) খাতা জমা দিতে হয়েছিল।
এরপর ম্যাডাম নিজেই এক মিনিট নীরবতা পালন করে খাতা নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
অবশেষে পরদিন টিচার্স রুমে ডাক পড়ল। বুঝলাম মৃত্যু আসন্ন। যদিও টিফিন পিরিয়ডে খেলা করা হয়ে গেছিল, তাও মনটা খারাপই লাগছিল রাত্রে মায়ের হাতের মাংসের কথা ভেবে। সুমিতা ম্যাডাম যখন বললেন মৃত্যুঞ্জয় কবিতার নামকরণের সার্থকতায় লিখেছ "মৃত্যুরে ডেকেছি আমি প্রিয়ের অনেক নাম ধরে", (কারণ প্রশ্ন ছিল নামকরণের সার্থকতা , আর সেটাই খাতার ওপর বড় বড় করে লেখা ছিল , তারপর থেকে উত্তর আর উত্তরের বিষয় বস্তু তো আগেই বললাম) তখন আমি ভাবছি সত্যিই তো "সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মতো এসে জাগে ধূসর মৃত্যুর মুখ"।
শেষপর্যন্ত চন্দ্রা ম্যাডামের হো-হো হাসিতে দেখি আমার পিঠে দুটো ডানা গজালো (যদিও অনেকের মতে সাপের পাঁচ পা গজিয়েছিল)। যাই হোক খাতা ফেলে সেদিন পালিয়েছিলাম, যে খাতা আমার আর ফেরত পাওয়া হয়নি। হয়ত আজও সে আমার অপেক্ষা করে, মাঝে মধ্যেই শুনি কে যেন বলছে, 'এবার লিখেই ফেল সেইদিনের শেষ না হওয়া লেখাটা আমি ছুট্টে চলে যাই তোর কাছে। বাঁধা ধরা পড়ার বইখাতার মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসে।'
- Get link
- X
- Other Apps
Popular Posts
আমার কষ্টগুলো ডালিমের মতো, লালের জমাট কেউ ভাঙতে পারে না
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment