Skip to main content

Featured

যে চোখ দিয়ে আমি মানুষ চিনলাম, যে কান দিয়ে আমি শুনলাম ভালোবাসি, যে হৃদয় দিলাম শতদল করে, সবশেষে যে শরীর আমি চিনেছি ঈশ্বররূপে, তার প্রতিটি স্তর মিথ্যে, আবেশ মিথ্যে। এমন ঘৃণ্য অভিজ্ঞতা অতি বড় শত্রুরও যেন না হয়। 

হৃদয় সখী

বড্ড বেমানান। কিসের সাপেক্ষে? কে? জানিনা। শুধু এটুকু বুঝি শহুরে মানুষদের পাশে খাপছাড়া। হ্যাঁ, ইন্ডিয়ানাপোলিসের অতিব্যস্ত মানুষের ভিড়ে সব খাপই ছাড়া। বলা ভালো অতিব্যস্ত গাড়ির ভিড়ে সব কেমন ছাড়া ছাড়া। কোন প্রেম জুড়তে জুড়তে জুড়লনা, কোন প্রেম ভেঙেচুরে গেল বলে ক্যানালে বান এল, নিদেনপক্ষে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে কে এই প্রেমের গল্প থুড়ি অপ্রেমের গল্প ফাঁদতে চলেছে তার খবর কিন্তু গঙ্গার ঘাট রাখে। আরে, বুঝলেন না? আমাদের গল্পে প্রেমিকার কাছে খবর এসেছে প্রেমিক মশাই হাজির হয়েছেন সোজা মল্লিকঘাটে। বেণী দুলিয়ে আমাদের দ্বিতীয় নায়িকা হাজির। বড় ক্রাইসিস মশাই। আপনি ভাবছেন এসব খবর হাওয়ায় ভাসে বটে কিন্তু তাই বলে ফেডেক্স শেষে বাতাসও নিয়ে আসে! না, অতটাও বেমানান না। খবর এনেছে পায়রা। অদ্বিতীয় নায়িকার চোখ তখন মিডফিল্ডারকে কাটিয়ে গোলপোস্টের দিকে ধেয়ে আসছে আসছে আসছে, ব্যাস। আর কি গোল। লাথি খেয়ে ল্যাপটপ ধাঁ করে উড়ে গেল খাটের কোণে, কফির কাপ উল্টে ভিজে একাকার নায়িকার কেশ পড়া টাক। হোমওয়ার্কের পাতা এক চুমুক কফি খেয়ে কাতলামো করতে করতে গড়িয়ে পড়ল খাটের তলায়। নায়িকাও ভাবে, ধুর এমন বেখাপ্পাভাবে শুরু হল, দিনটা যা যাবে বুঝতেই পারছি। বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এবার একেবারে দুয়ারে যম প্রকল্প। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, নায়কের দুয়ার। বিশাল ফটক। বুঝতেই পারছেন বহু মানুষের আনাগোনা তো লেগেই থাকে। তা সে প্রকল্পে নায়িকার প্রস্তাব, সত্যি বলতে হবে বা নায়িকার হুকুম তামিল করতে হবে। এই ফাঁকে বলে রাখি আমাদের নায়ক কিন্তু খুবই সফল এ ব্যাপারে। একবার খালি দুম করে দাড়ির বদলে বসিয়ে দিয়েছিল জিজ্ঞাসার চিহ্ন। অতো কৌতূহল ভালো না। কী বলেছিল জেনে আপনারা কী করবেন শুনি? শুনতে পেয়ে গেলেন? "বলেন কী মশাই আপনারা তো ভারী ডেঞ্জারাস লোক দেখছি।" আচ্ছা, বলেই দিই, বলেছিল, "আমি কি তোর চাকর?"  বুঝুন। না, তবে নবাবের উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল সৎ। বলতে চেয়েছিল, "আমি তোর। চাকর আসেনি?" সে আজ থেকে ২৫০ বছর আগের কথা। তখন লর্ড ক্লাইভ বসে খুচরো গুনছিল। শুনে বলল, "গোলাম হোসেন এখন ভগবানগোলায়।" তা সে ভগবানগোলা হোক আর ভগবান গোল্লায় পাঠাক, শুরু হল সেই পলাশীর যুদ্ধ থুড়ি খেলা। যাকে বাংলায় বলে ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার। ওহ আমাদের নায়কের নাম বলা হয়নি, নাম হল গিয়ে নাঃ, থাক। কিন্তু সেদিন খেলা এগোয় না। কারণ খারাপ আবহাওয়ার কারণে ইডেনে প্লাস্টিক পাতা ছিল। যাইহোক, খেলা ভাঙার খেলা না খেলে নায়িকাকে উঠে পড়তে হয়। এরপর নায়িকাসংবাদ নামে যে পত্রিকা বের হয় তাতে পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনে নায়িকা দেখে নায়কের নাম বেরিয়েছে। আমাদের সময়ে তো বাপু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় খবরের কাগজে নাম উঠলে বাড়িতে ডিম ভাতের প্যাকেট দিয়ে যেত পিসিমণি। আজকালকার বেখাপ্পা নায়িকাকে দেখুন, কাঁদছে। পাশে গ্লিসারিন রাখা। কপাল দিয়ে শীতের চামড়া উঠছে ওর। চোখ মুছছে। নাক দিয়ে জল পড়ছে। কারণ পিসিমণি ডিমভাত রাঁধেনি। মা কষা মাংস করেছে। রান্নার ঝাঁঝে তখন সকলের নাক যায় যায়। যাক গে যাক গে। অদ্বিতীয় নায়িকা দ্বিতীয় নায়িকাকে ফোন লাগায়, 'কীরে দোস্ত, বাসায় সব খবর ভালো?' ফোনের ওপার থেকে কুশল সংবাদ আসে। নায়ক দ্বিতীয় নায়িকাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আজ ডিম ভাত রান্না হচ্ছে ওদের বাড়ি। নায়িকার নিমন্ত্রণ। নায়িকার চোখমুখ আনন্দে ভার হয়ে আসে। নায়িকা নায়ককে ফোন লাগায়, 'কীরে দোস্ত, বাসায় সব কুশল তো?' নায়ক বলে,
 "আমাদের একখানি ছোটবাসা
গৃহহীন ঠাঁই পায় 
ভালো বাসা নামে। 
অদ্বিতীয়া বিরাজে সেইখানে 
উঠোন জুড়ে তার 
নূপুরের ছাপ ফেলে যায় 
মৃদু স্বরে। 
তারপর যদি থেমে যায় খেলা 
ঈশানী মেঘে আঁধার নামে খুব 
বৃষ্টি আসে 
ধুয়ে যায় সুখী-গৃহ-কোণ। 
গড়বি আবার? 
নতুন করে সব? 
ভাঙব না আর তিন সত্যি বলে।" 
আপনারা কী বলুন তো? মায়াদয়া নেই প্রাণে? আমাদের নায়িকার এমন সোনার বন্ধুই চাই। আপনারা যে যা বলুন ভাই। আর আপনারা জানেন যে আমাদের অদ্বিতীয় নায়িকা দ্বিতীয় নায়িকাকে ফোন করার নমাস দশ দিন পর নায়ককে ফোন করেছিল সেদিন? কী বোঝেন আপনারা বন্ধুত্বের? হেঃহেঃ আমার নায়িকাও বোঝেনা। তবে নায়ক বোঝে। এই বাঁচোয়া। যদি প্রেম দিলে না প্রাণে, তো কী বন্ধুত্ব আছে। সবচেয়ে কাছের বন্ধু করে রাখার ইচ্ছে আছে। 
এসব অবশ্য আপনারা জানবেন কী করে। তবে আমাদের নায়িকা সব জানে। তো যাইহোক। নায়িকা ডিমভাত খেতে খেতে নায়ককে বলে, 
"ভালোবাসা যার মরীচিকা হৃদি 
মেঘমল্লার গাইবে কীসের বলে? 
বৃষ্টি আসে এক্কা দোক্কা পায়ে 
ঘুমঘোরে আমি গাইতে পারি ইমন কল্যাণ। 
যদি  বলিস, "ভালোবাসি খুব।" তিনসত্যি?"

কী? নিসপিস করছে হাত? মনে হচ্চ্যে থামানো দরকার? বিশ্বাস করুন। আমারও মনে হয়েছিল, আমার থামা দরকার। 
বন্ধুত্ব বড় কঠিন। তাই না? অথচ দেখুন ছোটবেলায় আমাদের কত বন্ধু ছিল? সত্যিকারের বন্ধু। সেখানে মিথ্যে নেই। গোপন করার কিছুই নেই। নিজের সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল সেই বন্ধুত্ব। অথচ সময় বুঝে পিঠটান দিল একা ফেলে। অদ্বিতীয়ার কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গেল বড্ড। মেয়েটা ভালো আছে। সে আর কারও গল্পে নায়িকা নয়। পাঠক মাত্র। পুরোনো চিঠিপত্র, ছবি ঘাঁটতে ঘাঁটতে কাল ঘুমিয়ে পড়েছিল। অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে সব আজকাল। সকালে উঠে আমায় বলে। আমি লিখে রাখি। ও জানেনা এখনও, আমার গল্পে ও আজও নায়িকা। মেয়েটার অদ্ভুত স্বভাব। খাপছাড়া হয়ত। অনেকবার কেঁদেছে, মার খেয়েছে, মরে গেছে বহুবার। ফিরে আসে আমার কাছে। বলে ইছামতীর পাশে এসে বসলে ওর হালকা লাগে। কাগজের নৌকা বানায়। কানে কানে বলে সব কথা। আমি বুকে করে ভাসিয়ে নিয়ে যাই ওদের অনেক দূরে। যেখানে গেলে আর ফিরে আসা যায়না। যেখানে মেয়েটা কাঁদে না।

Comments

  1. অদ্ভুত রকমের সুন্দর। আমার আশীর্বাদ নিস রে মা।

    ReplyDelete

Post a Comment